আমি একজন শিক্ষার্থী, আমার পড়ালেখায় কোনোভাবেই মন বসে না। এখন আমি কী করতে পারি?
প্রথমেই তোমাকে বলি… পড়াশোনায় মন না বসা একদম স্বাভাবিক! তুমি একা নও—তোমার মতো তোমার বন্ধুদেরও একই সমস্যা হয়। এই সমস্যার কোনো সমাধান নেই, এমনটা ভাবলে কিন্তু বড় ভুল করবে।
প্রথমেই তোমাকে বলি… পড়াশোনায় মন না বসা একদম স্বাভাবিক! তুমি একা নও—তোমার মতো তোমার বন্ধুদেরও একই সমস্যা হয়। এই সমস্যার কোনো সমাধান নেই, এমনটা ভাবলে কিন্তু বড় ভুল করবে। এটা শুধুমাত্র একটা সাময়িক চ্যালেঞ্জ, যেটা তুমি একটু সচেতনভাবে কাজ করলেই পার করতে পারবে।
তাহলে শুরু করা যাক! তোমার সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করি।
কেন পড়াশোনায় মন বসে না?
পড়াশোনায় মনোযোগ না থাকার অনেক কারণ থাকতে পারে। কিছু প্রধান কারণ নিচে দেওয়া হলো:
মনঃসংযোগের অভাব: আমরা প্রায়ই ভুল জায়গায় মনোযোগ দিই, পড়ার সময়ে চিন্তা করি সিরিজের নতুন এপিসোড নিয়ে!
শারীরিক দুর্বলতা: পর্যাপ্ত ঘুম ও সঠিক খাবারের অভাবে আমাদের শরীর ক্লান্ত থাকে।
পরিবেশের অভাব: পড়াশোনার সঠিক পরিবেশ না থাকলে মনোযোগ হারিয়ে যায়।
গাইড বা কোচের অভাব: একজন ভালো মেন্টর অনেক পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।
লক্ষ্যহীনতা: জীবনে যদি পরিষ্কার লক্ষ্য না থাকে, তবে কোন দিশা ধরে এগোব?
সঠিক পদ্ধতির অভাব: পড়াশোনায় কোন পদ্ধতি কীভাবে কাজে লাগবে তা না জানলে সময় নষ্ট হয়।
এগুলো ছাড়াও একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় সমস্যা হল Distraction। সোশ্যাল মিডিয়া, গেমস, ভিডিও প্ল্যাটফর্ম—সবই আমাদের মনোযোগ কেড়ে নিচ্ছে।
আমরা সারাদিন “Distraction Practice” করি, অথচ মনোযোগের জন্য কোনও চর্চা করি না! এতে করে পড়ার টেবিলে বসলে মন কাজ করতে চায় না।
মনঃসংযোগ বাড়াতে কী করতে পারি?
মনোযোগ বাড়ানোর কিছু কার্যকরী পদ্ধতি রয়েছে, যেগুলো প্রতিদিন চর্চা করলে আশ্চর্যজনক ফলাফল পাবে। এবার সেগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক:
১. প্রতিদিন ধ্যান করা (Meditation)
ধ্যান মানে তোমার মনকে নিয়ন্ত্রণ করা। প্রতিদিন সকালে মাত্র ৫-১০ মিনিট চুপচাপ বসে নিজের শ্বাসের দিকে মনোযোগ দাও। প্রথমে মনে হবে এটা বোকামি, কিন্তু কয়েক সপ্তাহ পর তুমি নিজেই বুঝতে পারবে কীভাবে এটা তোমার মনোযোগ বাড়াচ্ছে।
আমি নিজেও ধ্যান করি, আর সেটা আমার জীবনে অমূল্য ফল দিয়েছে।
২. প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটাও
মোবাইল, টিভি, কম্পিউটার—এসব থেকে দূরে গিয়ে প্রকৃতির সান্নিধ্যে কিছুক্ষণ থাকো। গাছের সবুজ পাতা, নদীর শব্দ, পাখির গান—এসব মনকে শান্ত করে।
আমাদের বাংলার প্রকৃতি এত সুন্দর যে তোমার মন ভাল হয়ে যাবে! প্রতিদিন অন্তত ১৫ মিনিট প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটানোর চেষ্টা করো।
৩. POMODORO Technique ব্যবহার করো
এই পদ্ধতিতে তুমি ২৫ মিনিট মনোযোগ দিয়ে পড়বে এবং ৫ মিনিট বিরতি নেবে। আবার ৫০ মিনিট পড়বে এবং ১০ মিনিট বিরতি নেবে।
এভাবে পড়ার সময় ছোট ছোট বিরতি দিলে মন ক্লান্ত হবে না এবং আরও ভালোভাবে তথ্য ধরে রাখতে পারবে।
তোমার পড়ার সময়সূচি এভাবে সাজিয়ে দেখো। এটি শুধু মনোযোগ বাড়ায় না, সময়ও সাশ্রয় করে।
৪. নিজের লক্ষ্য ঠিক করো
তোমার লক্ষ্য যদি পরিষ্কার না হয়, তবে মনোযোগ দেওয়া কঠিন। তুমি কেন পড়াশোনা করছ? কিসে তোমার আগ্রহ?
লক্ষ্য ঠিক করে সেটি প্রতিদিন নিজের সামনে রাখো—দেয়ালে লিখে ঝুলিয়ে রাখলে বা মোবাইলের ওয়ালপেপার বানিয়ে নিলেও চলবে।
একটি গল্প শোনাই—একবার এক ছাত্র আমাকে বলেছিল, সে ডাক্তার হতে চায়, কিন্তু লক্ষ্য পরিষ্কার ছিল না। তাকে নিজের স্বপ্নের ছবি কল্পনা করতে বলেছিলাম। তারপর সে পড়াশোনার জন্য এমন মনোযোগ দিতে শুরু করল যে, তার গল্প আজ অন্যদের অনুপ্রেরণা দেয়!
৫. একজন কোচ বা মেন্টর খুঁজে নাও
একজন দক্ষ কোচ তোমার জীবনের দিশা বদলে দিতে পারে। তিনি তোমার ভুলগুলো ধরিয়ে দেবেন এবং সঠিক পথে চলতে সাহায্য করবেন।
আমার নিজের জীবনের কথা বলি—যখন আমি কলেজে পড়তাম, তখন একজন মেন্টর আমাকে শেখালেন কীভাবে সময় কাজে লাগাতে হয়। আজ আমি সেই শিক্ষার জন্যই তোমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।
৬. প্রত্যহ শারীরিক পরিশ্রম করো
আমাদের শরীর যদি সুস্থ না থাকে, তাহলে মনও ভালো থাকবে না। প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটা, দৌড়ানো, খেলাধুলা, বা যোগব্যায়াম করো।
বিশেষ করে সন্ধ্যার সময় এক ঘণ্টা খেলার জন্য বের হও। এতে শরীর ও মনের মধ্যে ভারসাম্য আসবে।
বাংলায় একটা প্রবাদ আছে—“শরীর সুস্থ তো মনও সুস্থ।” খেলাধুলা করো, নিজেকে ফ্রেশ অনুভব করবে।
পড়াশোনার সময় মজাদার কিছু কৌশল
১. গল্প তৈরি করো: তুমি যা পড়ছ, তা নিয়ে কল্পনায় একটা গল্প বানিয়ে নাও।
২. রং পেন ব্যবহার করো: রঙিন হাইলাইটার বা পেন দিয়ে পয়েন্টগুলো আলাদা করো।
৩. বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করো: যা পড়ছ, তা বন্ধুদের শেখাও। এতে তোমার শেখা আরও পোক্ত হবে।
একটি অনুপ্রেরণামূলক গল্প
তোমার মতোই একবার এক ছাত্র আমার কাছে এসেছিল। বলেছিল, “দাদা, আমার পড়াশোনায় একদম মন বসে না। কী করব?”
আমি তাকে POMODORO Technique শেখালাম, লক্ষ্য ঠিক করতে বললাম, আর প্রতিদিন ১০ মিনিট ধ্যানের অভ্যাস করতে বললাম।
দেখতে দেখতে তার জীবনে পরিবর্তন আসতে শুরু করল। তার মনোযোগ বাড়ল, তার পরীক্ষার রেজাল্ট ভালো হলো। সেই ছাত্র আজ একজন সফল ইঞ্জিনিয়ার।
তুমি যদি সত্যিই নিজের জীবনে পরিবর্তন আনতে চাও, তবে তোমার শুরুটা আজই করতে হবে।
আমার পরামর্শ
তোমাকে শুধু সঠিক পথে চলতে হবে। মনে রাখবে, কোনো ম্যাজিক নেই। ছোট ছোট অভ্যাসগুলোই তোমার জীবনে বড় পরিবর্তন আনবে।
তোমার যাত্রার জন্য আমি তোমার পাশে আছি। যদি আরও সাহায্য চাও, তবে আমাদের ‘Champion Student Masterclass’-এ যোগ দাও। সেখানেই তোমার জন্য রয়েছে বিশেষ গাইডলাইন এবং পথপ্রদর্শন।
আমাদের লক্ষ্য একটাই—তোমাকে তোমার সেরা সংস্করণে পৌঁছাতে সাহায্য করা।
শেষ কথা
আমাদের বাংলার সংস্কৃতি কিন্তু পড়াশোনাকে অনেক গুরুত্ব দেয়। “বিদ্যা অমূল্য সম্পদ”—এই কথাটা শুধু কথার কথা নয়।
তোমার লক্ষ্য হতে হবে নিজের ও পরিবারের স্বপ্ন পূরণ করা এবং বাংলা থেকে আরও সফলতার গল্প তৈরি করা।
তুমি যদি এই পদ্ধতিগুলি প্রতিদিন চর্চা করো, তাহলে পড়াশোনায় মন বসবে না—এমনটা সম্ভবই নয়!
তাহলে আর দেরি কেন? আজ থেকেই শুরু করো!
তোমার Concentration Enhancement Coach,
তন্ময় মহাতো
তোমার যদি এই বিষয়ে আরও কিছু জানতে ইচ্ছে করে, তবে আমার সাথে যোগাযোগ করো:
ইমেইল: connect@tanmoymahato.com
ওয়েবসাইট: tanmoymahato.com